top of page
DonaldDuck12.jpg

আমার কথা
(Preamble on Limericks and other poems) 

কবিতা আমি কখনও লিখতাম না - লেখার চেষ্টাও করি নি।  স্কুলের ম্যাগাজিনে একবার একটা ইংরেজি কবিতা কেমন করে লিখে ফেলেছিলাম – ছাপাও হয়েছিল।  ব্যাস ঐখানেই ইতি।  তবে কবিতা যে পড়তাম না তা’ নয়।  সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’, রবি ঠাকুরের ‘শিশু’, ‘ছড়ার ছবি’ ‘সঞ্চয়িতা’ ‘চয়নিকা’ বাড়িতেই ছিল।  পড়ে পড়ে বহু কবিতাই মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল।  তা ছাড়া বাংলা পাঠ্যবইয়ের কবিতাতো পড়তেই হ’ত।  ‘…কবিতার প্রথম দশ লাইন মুখস্থ লিখ’, ‘প্রসঙ্গ উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা কর’, ভাব সম্প্রসারণ, ভাবার্থ, মর্মাথ – স্কুলে পরীক্ষার প্রথম দিনেই বাংলা পরীক্ষা হওয়া মানে আদ্ধেক পরীক্ষা হয়ে যাওয়া।  আর যতই পড়, যতই ভাল করে লেখ, যতই কমন পাও – নম্বর ষাটের ওপর পেরোত না। বাংলা পেপারে ঐ না কি ঢের।  এ সব অবশ্য ষাটের দশকের কথা।

 

সত্যি বলব – কবিতা লিখিনি কেন? ভয়ে।  বাড়ির পাশে কেষ্টদাদের মুদির দোকান ছিল।  কেষ্টদারা উৎকলবাসী।  তাদের বছর আট-নয়ের একটা ছেলে ভগিয়া রোজ সকালে উঠে সুর করে নামতা পড়ত।  আর আমার তখন কেবল মনে হ’ত -

 

যে সব লোকে পদ্য লেখে

তাদের ধরে খাঁচায় রেখে,

কানের কাছে নানান সুরে

নামতা শোনায় একশ উড়ে’।

 

একা ভগিয়ায় রক্ষা নাই – তায় আবার একশ উড়ে! কি দরকার বাবা - সুখে থাকতে ভূতে কিলায় কেন?

 

আমরা যে সময়ে স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছি, বোর্ডের নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলস্বরূপ আমাদের কোন ইংরেজি পাঠ্যপুস্তক ছিল না।  ইংরেজি পেপারের দু’শ নম্বরই ছিল ট্র্যানস্লেশন, কোন প্যাসেজ থেকে প্রশ্ন-উত্তর, প্রেসি, চিঠি লেখা, ডায়লগ লেখা, রচনা লেখা আর গ্রামার।  কাজেই কীটস, শেলি বায়রন, টেনিসন, ব্রাউনিং, ওয়ার্ডসওয়ার্থ – এনারা যে সব ইংরেজ কবি সেটা ইংরেজি স্যারের কাছে শুধু জেনেছিলাম।  তাঁদের কয়েকটা বিখ্যাত কবিতার কোন কোন বিখ্যাত লাইন স্যারের থেকে শুনে মুখস্থ করে রেখেছিলাম সুযোগ মতন ইংরেজি রচনায় কোটেশন দেব বলে। ইংরেজি কবিতার দৌড় ওই পর্য্যন্ত।

 

স্কুল ছাড়ার সাথে সাথে কবিতাদেরও ছুটি দিলাম।  ‘পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসান রুটি’ বলে নয় – পদার্থ বিজ্ঞানের হরেক সুত্র আর ক্যালকুলাসের ঘুর্ণিজলে হাবুডুবু খেয়ে। পেশাগত জীবনে বিজ্ঞানী হওয়ার সুবাদে কর্মজীবন কাটল ল্যাবোরেটরির চার দেওয়ালের মধ্যে।  অবশেষে একদিন সময় ফুরোবার আগেই জোড় করে মায়াজাল কেটে বেরিয়ে এলাম।

 

মোবাইল, ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার এ সবের কল্যাণে এখন সামাজিক যোগাযোগ খুব বেশী রকম বেড়ে গেছে।  আত্মীয়স্বজন, পুরান যত বন্ধুবান্ধব সব এখন ফেসবুকের বন্ধু, হোয়াটসঅ্যাপের গ্রুপ।  তার ওপর ফেসবুকের হরেক রকম গ্রুপের হরেক রকম বন্ধু।  কারোর পঞ্চাশটা বন্ধু তো কারোর সাড়ে চার হাজারের ওপর। আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়া আসা নেই, বন্ধুবান্ধবের সাথে বসে আড্ডা দেবার ব্যাপার নেই, চা সিঙ্গারা খাবার বা খাওয়ানোর ব্যাপার নেই।  শুধু স্মার্টফোনে ফেসবুক খুললেই জানা যাবে কে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে গেছে, কে কোথায় বেড়াতে গেছে ছবি সহ।

 

সে না হয় হ’ল।  কিন্তু কে জানতো ফেসবুক সবাইকে কাব্যসাহিত্য চর্চ্চার এত সুযোগ এনে দেবে?  কত যে কবিতার গ্রুপ, কত সাহিত্যের গ্রুপ – আর শত শত তাদের সদস্য।  কেউ কেউ যে কত গ্রুপের সদস্য তার ইয়ত্তা নেই। এত যে কবি সাহিত্যিক আছেন ফেসবুক না থাকলে জানতেও পারতাম না।  তবে এনাদের মধ্যে কেউ কেউ যথেষ্ট ভাল লেখেন।

 

এভাবেই একদিন পেয়ে গেলাম কলেজ জীবনের এক সহপাঠী বন্ধুর কবিতা।  নতুন করে যোগাযোগ হ’ল।  কলেজ জীবন থেকে শুরু করে বর্তমান কাল ইস্তক বন্ধুর যত কবিতা ফেসবুকে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করল। একদিন নিতান্তই মস্করার খাতিরে বন্ধুর ছবি নিয়ে অন্ত্যমিলযুক্ত দুটি লাইন লিখেছিলাম।  উত্তর এল চার লাইনের কবিতায়।  মজা পেয়ে আমি প্রত্যুত্তর পাঠালাম আট লাইনের। একটা পাঁচ লাইনের ছড়া লিমেরিকও লিখে দিলাম। সেই থেকে হয় শুরু। সাহিত্যচর্চ্চা নয় – নিতান্তই সময় কাটানোর খেলা।
 

ইতিমধ্যে কিছু শুভাকাঙ্খির সৌজন্যে অনেক কাব্যসাহিত্য গ্রুপে নাম উঠে গেল।  নতুন নতুন কবি সাহিত্যিক বন্ধুও জুটল।  অল্পস্বল্প বাহবা পাওয়ায় লিমেরিক আর ছড়া লেখার ভূত ঘাড়ে বেশ চেপে বসল।  দু’একটি গ্রুপ স্বীয় উদ্যোগে সদস্যদের লেখা নিয়ে বইও ছাপিয়ে ফেলল।  আমার কিছু লিমেরিকও তাতে স্থান পেল।  তবে লেখক কপি পেলাম না। উলটে কুরিয়ার খরচ সহ বইয়ের দাম পাঠিয়ে সংগ্রহ করতে হ’ল।  বছর দুই বাদে একদিন নিজে থেকেই লিমেরিক, ছড়া লেখার ভূতটা ঘাড় থেকে কেমন যেন নেমে গেল।

 

আমার ব্লগে নানারকম লিমেরিকেরই প্রাধান্য।  নানান সময়ে নানান রকম লিমেরিক লেখা হয়েছিল।  পরে দেখা গেল যে সেগুলোকে বেশ বিষয়ভিত্তিক ভাগ করা যেতে পারে - যেমন ভৌতিক লিমেরিক, হুলোর লিমেরিক, খাদ্যরসিক লিমেরিক, দার্শনিক লিমেরিক, পদাবলী লিমেরিক বা কোন নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া ‘হরে কর কম’ লিমেরিক।  লিমেরিক ছাড়া কিছু পরীক্ষামূলক কবিতাও লেখা হয়েছে যেমন ফিবোন্যাসি সংখ্যা বা পাই (ধ্রুবক) এর মান অনুসরণ করে অক্ষর বা শব্দ সংখ্যা দিয়ে, তুনক ছন্দে, সাত লাইনের ক্রমান্বয়ে শব্দ সংখ্যা কমিয়ে বাড়িয়ে ‘সপ্তক’ বা উন্মুক্ত ‘হাইকু’

 

    আত্মপরিচয়দান পালা

 

প্রথমে বন্দিনু আমি পার্ব্বতী-নন্দনে।

ফুল চন্দনে পুজি যত দেবগণে।।

লিমেরিক প্রেমী আছে যত বন্ধুগণ।

সকলেরে জানাইলাম প্রীতি-সম্ভাষন।।

শুন শুন ভদ্রজন শুন দিয়া মন।

পরিচয় পালা সারি আমি অভাজন।।

 

বন্দো কুলেতে জন্ম নৈকষ্য কুলীন।

উপাধ্যায় জুড়িয়া নামে আমি অতি দীন।।

তিন কুড়ি বৎসর করিয়াছি জয়।

তারি সাথে যোগ কর চারে পাঁচে নয়।।

জৈষ্ঠের একুশেতে আসি ধরাধামে।

শঙ্খ বাজিল গৃহে রাত্রি দুই যামে।।

ইংরাজি জুন পাঁচ রাশিতে মিথুন।

মৃগশিরা তারা হেতু কপালে আগুন।।

সনৎকুমার নাম রাখিলেন মাতা।

হাসিয়া হইল খুন অলখে বিধাতা।।

নারদ-গুরুর নামে এ হেন কলঙ্ক।

ব্রহ্মজ্ঞান ছাড়ি ঘাঁটে সংসার-পঙ্ক।।

খর্বকায় কৃষ্ণবর্ণ বাঙালী-শরীর।

শীর্ণদেহ টিকে আছে কৃপা শ্রীহরির।।

পদার্থ-বিদ্যা বিষয়ে স্নাতকোত্তর।

গবেষণা করিয়া লভি ডিগ্রী ডক্টর।।

পেশা ছিল গবেষণা নেশা ছিল পাখী।

কিরূপে বা একসাথে শ্যাম কূল রাখি।।

ভাগ্যাকাশের তারা ছাড়ি আকাশের তারা।

দেখা ছিল আরো সখ, পাখী-সখ ছাড়া।।

ছয় পাঁচ একাশিতে বিধাতার বরে।

সন্ধ্যালগনে ঘরনী আসিলেন ঘরে।।

জুটিল চাকুরী পাট-গবেষণাগারে।

সুখের চাকুরী ছিল, পোষে সরকারে।।

তবু সহিলনা সুখ এ পোড়া কপালে।

হাঁপাইয়া উঠিনু মুই, আসি শেষকালে।।

এত সব একই সাথে সামলানো দায়।

স্বাধীনতা পেলে মন কি বা আর চায়।।

তখনো ছিল যে বাকি সাতটি বছর।

চাকুরী ছাড়িয়া দিয়া লই অবসর।।

 

পুত্রের আবাহনে ভিটেমাটি ছাড়ি।

জন্মভূমি ত্যাজিয়া দিই বর্গীদেশে পাড়ি।।

আপাতত কাটিতেছে সুখের জীবন।

আহার, ওষুধ, মুক্ত-পবন সেবন।।

জীবনের বেলাশেষে এক ফালি কোনে।

জীবাত্মা বসিয়া মোর শেষদিন গোনে।

গুন গুন করি মন হরিনাম গায়।

শ্রীহরি শ্রীহরি বলি পালা হইল সায়।।

সনৎকুমার ব্যানার্জ্জী

থানে, মহারাষ্ট্র

পরিচিতি

জন্ম – ৫ই জুন, ১৯৫১। জন্মস্থান – সাঁইথিয়া, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ। পিতৃপুরুষের আদি নিবাস – অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা) অন্তর্গত আরিয়াল গ্রাম।  পিতা - দিগেন্দ্র চন্দ্র ব্যানার্জ্জী (১৯১৬ – ২০০৬) ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো’র উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছিলেন। মাতা - মিনতি দেবী (১৯২৯ – ২০০৮)। 

 

শিক্ষা - বালীগঞ্জ রাষ্ট্রীয় বিদ্যালয় (উচ্চ মাধ্যমিক), আশুতোষ কলেজ (স্নাতক – পদার্থবিদ্যা অনার্স) ও রাজাবাজার সাইন্স কলেজ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালর (স্নাতকোত্তর – পদার্থবিদ্যা)।  পি এইচ ডি (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৮১) গবেষণা ইন্ডিয়ান অ্যসোসিয়েশন ফর দা কাল্টিভেশন অফ সাইন্স, যাদবপুর, কলকাতা। 

 

কর্মজীবন – বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ্যা বিভাগ, ইন্ডিয়ান জুট ইন্ডাস্ট্রিস রিসার্চ অ্যসোসিয়েশন, কলকাতা। স্বেচ্ছা অবসর – ২০০৪।  বর্তমান নিবাস – থানে, মহারাষ্ট্র। 

 

সখ – মহাকাশ ও পাখি বিষয়ক বিবিধ জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখা যা ইতিমধ্যে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের জার্নাল ‘জ্ঞান বিজ্ঞান’ সহ বেশ কিছু ওয়েব ম্যাগাজিন ও অন্যান্য পত্র-পত্রিকাতে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে থাকে।

bottom of page